ময়মনসিংহ সিটির ৩ কিলোমিটার সড়কই খানাখন্দে ভরা

ময়মনসিংহ সিটির ৩ কিলোমিটার সড়কই খানাখন্দে ভরা

একে তো খানাখন্দে ভরা, তার ওপর বৃষ্টিতে পানি-কাদায় একাকার সড়ক। এরই মধ্যে দুর্ভোগ সয়ে চলছে মানুষ। চলাচল করছে ছোট-বড় যানবাহন। এমন চিত্র ময়মনসিংহ নগরীর জিলা স্কুল মোড় থেকে আকুয়া বাইপাস সড়ক পর্যন্ত। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিসি) এলাকায় সড়ক ও জনপথের ২৫ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেহাল দশা সাড়ে তিন কিলোমিটারের এ সড়কটি।

সাড়ে তিন কিলোমিটার এ সড়কটি ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে থাকলেও এটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে। এক বছরের বেশি সময় ধরে সংস্কার না হওয়ায় সড়কটির বেশ কিছু অংশে এখন হেঁটে চলাই দুষ্কর।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা থেকে নগরীতে প্রবেশের একমাত্র প্রবেশপথও এই সড়ক। চলতি বর্ষায় খানাখন্দগুলো রূপ নিয়েছে বড় গর্তে। ফলে যানবাহনগুলো চলছে ঝুঁকি নিয়ে। প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও।

ফুলবাড়িয়া পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে দাপুনিয়া পর্যন্ত ভাড়ায় যাত্রী আনা-নেওয়া করেন অটোরিকশাচালক শামসু মিয়া। বর্ষার আগে এ সড়কে চলাচলে কিছুটা সমস্যা হলেও বর্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে বেশ ভোগান্তির মধ্যে আছেন তিনি।

শামসু মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সড়কটিতে খানাখন্দ আর ছোট-বড় গর্ত রয়েছে। অল্প বৃষ্টিতেই সেসব গর্তসহ সড়কে পানি জমে যায়। ফলে কোনটা ছোট আর কোথায় বড় গর্ত, তা বোঝার উপায় থাকে না। এ নিয়ে আমাদের খুবই সমস্যার মধ্যে দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ বার ফুলবাড়িয়া-ময়মনসিংহ যাওয়া-আসা করেন সিএনজিচালক শাকিল মিয়া। সড়কের এমন পরিস্থিতিতে দুর্ভোগ তার নিত্যসঙ্গী। তিনি বলেন, এই সড়কের ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড রেলক্রসিং থেকে মাদরাসা কোয়ার্টার গোরস্তানের একটু সামনে পর্যন্ত ৩০০ মিটার অংশ সবচেয়ে নাজুক। এতটাই খারাপ যে বৃষ্টির দিন সিএনজি অর্ধেক তলিয়ে যায়। তখন বাধ্য হয়ে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে অন্য সড়ক ব্যবহার করে ফুলবাড়িয়ায় যেতে হয়।

এমন বেহাল অবস্থা থাকায় ক্ষুব্ধ এই সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরাও। আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, সড়কটির অবস্থা বরাবরই খারাপ। তা ছাড়া পানিনিষ্কাশনের তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি খানাখন্দে জমে থাকে। ফলে বৃষ্টি না থাকলেও সড়কে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে। কী আর করা! তাই বাধ্য হয়ে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে।

শুধু এ পথে চলাচলকারীরাই নয়। সড়কের এমন ভাঙনে চরম দুর্ভোগে স্থানীয় বাসিন্দারাও। নিত্যদিনের অসহনীয় দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে এই সড়কটির দ্রুত টেকসই সংস্কার চান তারা।

ফারহান হোসেন নামের এক বাসিন্দা বলেন, পুরো ফুলবাড়িয়া উপজেলার মানুষ এই রাস্তা ব্যবহার করে আর আমরা আকুয়ার বাসিন্দারা তো রয়েছিই। এ চাপ যে রাস্তায়, সেই রাস্তাটির দিকে যেন কারোরই নজর নেই। পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে নানা কারণ-অকারণে রাস্তার অবস্থা খারাপ। প্রতিবছর বর্ষা এলেই আরও বেশি খারাপ হয়ে যায়। এই সড়ক দিয়ে কোনো অসুস্থ মানুষ যাতায়াত করতে পারে না, কারণ তিনি আরও অসুস্থ হয়ে যান।

শাহীনূর রহমান শিমুল নামের এক বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী বলেন, ভাঙা রাস্তার কারণে এখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। কোনো রিকশা এখানে আসতে চায় না। হেঁটে যে বাসায় যাব, সেটিও কঠিন হয়ে যায়। আমরা দেখি প্রায়ই কোনো না কোনো রিকশা-অটো উল্টে যায়। একটা বিভাগীয় শহরের ভেতরের একটি জনগুরুত্ব রাস্তা এতটা খারাপ কী করে থাকে, সেটি আমার বোধগম্য নয়।

এ বিষয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিটি করপোরেশনের অধীনে আমার এলাকার অন্যান্য রাস্তা ভালো থাকলেও সড়ক ও জনপথের এ রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী না। এ রাস্তাটি সংস্কারের জন্য জন্য সড়ক বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের বারবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। দুর্ভোগ লাঘবে তারা অতিদ্রুত সড়কটি সংস্কার করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

বর্ষা শেষেই সংস্কারকাজ শুরু করবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। এমনটা জানিয়ে ময়মনসিংহ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সড়কটি নতুন করে নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে চার কোটি ২০ হাজার টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। দরপত্রপ্রক্রিয়া শেষ করে গত জুলাইয়ে ঠিকাদারও নিয়োগ করা হয়েছে।

কিন্তু বর্ষার কারণে ঠিকাদার নির্মাণকাজ শুরু করতে পারছেন না, এমন তথ্য দিয়ে তিনি আরও বলেন, সড়কটির মধ্যে ড্রেনেজ-ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। বৃষ্টি হলে সমস্ত পানি সড়কের ওপরে থাকে। তবে ঠিকাদার ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বর্ষা শেষ হলেই কাজ শুরু করা হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন